খুলনা নগরীর অন্যতম প্রবেশদ্বার গল্লামারী এলাকার ময়ূর নদীর ওপর দুটি সেতু শিগগিরই ভেঙে ফেলা হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, গত ১০ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের পর সেখানে নতুন চার লেনের সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে তৈরি হবে নতুন সেতু।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, নতুন সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এখন আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। ঠিকাদার নির্বাচনের পর কাজ শেষ করতে দেড় বছর সময় দেওয়া হবে।
খুলনার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ বিজনেস বার্তাকে বলেন, রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে নতুন এই সেতুর নকশা করা হয়েছে। নতুন সেতু নির্মাণের আগেই গল্লামারীতে বিদ্যমান দুটি সেতু ভেঙে ফেলা হবে। খুলনা সিটি করপোরেশন ময়ূর ড্রেজিংয়ের কাজ করছে। নদী।ভবিষ্যতে সেতুর নিচ দিয়ে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।সেতুটি হবে চার লেনের,দৈর্ঘ্য ৭০ মিটার ও প্রস্থ ২০ মিটার।সেতুর উচ্চতা হবে ময়ূর নদীর জলস্তর থেকে ৫ মিটার। নদীতে কোনো পিলার থাকবে না।এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ছাড়পত্রও নেওয়া হয়েছে।
নগরবাসী বলছেন, নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে ময়ূর নদীর সৌন্দর্য ফিরে আসবে। সেতু ও ময়ূর নদীর সৌন্দর্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে পুরো শহর। এটি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। তাছাড়া গল্লামারী সেতুতে সারা বছরই ভাসমান কাঁচাবাজার থাকে। ব্রিজে বাস-ইজিবাইক, ভ্যান পার্কিং করায় যান চলাচলে অসুবিধার পাশাপাশি যানজটের সৃষ্টি হয়। নতুন ব্রিজ নির্মিত হলে এসব থেকে মুক্তি মিলবে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, খুলনাবাসীর সকল আপত্তি উপেক্ষা করে গল্লামারী এলাকার ময়ূর নদীর উপর নতুন সেতুটি নির্মাণ করেছে সাওজ। এতে জনগণ ও সরকারের অর্থ অপচয় হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, এটি আসলে সেতু ছিল না, এটি ছিল একটি কালভার্টের মতো। এটি নৌপথের কথা না ভেবে নদীর মাঝ বরাবর আড়াআড়িভাবে নির্মিত হয়েছে। সেখান দিয়ে কোনো ছোট নৌকা চলাচল করতে পারবে না।
নৌপথের কথা না ভেবে কেন সেতুটি নির্মাণ করা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, সেতুটি নির্মাণের সময় তিনি অন্যত্র কাজ করছিলেন। ফলে কেন এবং কীভাবে এমন সেতু তৈরি হয়েছে তা তিনি জানেন না।
খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বণিক বার্তাকে বলেন, ময়ূর নদী বাঁচাতে খনন কাজ চলছে, একই সঙ্গে নদীর দুই তীরের সংযোগস্থল ওয়াকওয়ে, দুই তীরের সংযোগ সেতু, নৌযান চলাচলসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বিনোদনের ব্যবস্থা, পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।গতি ও সৌন্দর্য ফিরে আসবে ময়ূর নদীতে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে ময়ূর নদীর ওপর একটি সেতু নির্মিত হয়েছিল। তবে সেতু নির্মাণের বছর ও ব্যয়ের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় এর পাশেই ২০১৬ সালে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে সেতুটি ময়ূর নদীর জলস্তর থেকে মাত্র ৫ ফুট উপরে নির্মিত হয়েছে। সেতু নির্মাণের সময় বিআইডব্লিউটিএর ছাড়পত্রও পাওয়া যায়নি। ফলে ময়ূর নদী খনন করলে নৌ চলাচলের ঝুঁকি থেকে যায়। খুলনা সিটি করপোরেশন ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নির্মাণ প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই সেতুটি ভাঙার দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু সাওয়াজ তা আমলে নেয়নি। বিআইডব্লিউটিএ ২০২০ সালের আগস্টে সেতুটি ভেঙে ফেলার সুপারিশ করে।
No comments:
Post a Comment